September 27, 2025, 11:45 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ আবারও নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১২.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে)। এর ফলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের গড় বা মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৩৮ ডলার বা ৭৭ হাজার ৪৩৩ টাকা।
মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮৪৩ কোটি ডলার। গত মার্চে ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৪.৮ বিলিয়ন ডলার, যা জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ১১২.১৬ বিলিয়নে। এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঋণ ছিল ১০৩.৭৩ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণ বৃদ্ধির পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ কাজ করছে—অবকাঠামো প্রকল্পে বিপুল ঋণ গ্রহণ. মুদ্রার অবমূল্যায়ন. বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়লেও সুদ ও কিস্তি পরিশোধের চাপ সমানতালে বাড়ছে।
বর্তআমান সরকারের প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বৈদেশিক ঋণ বাড়ে প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে সরকার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতও বিদেশি উৎস থেকে কম সুদের ঋণ গ্রহণে ঝুঁকে।
জুন শেষে মোট বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সরকারি খাতের অংশ ৮২ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতের অংশ ১৮ শতাংশ। সরকারি খাতের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯,২৩৭ কোটি ডলার, যা মার্চে ছিল ৮,৪৯২ কোটি ডলার। বেসরকারি খাতের ঋণ জুন শেষে ছিল ১,০৯৭ কোটি ডলার।
বিশেষজ্ঞ মতামত/
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন,
“বিদেশি ঋণের বড় অংশ সরকারের, যা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার হয়। তবে অতীতে কিছু প্রকল্পে অপচয় হয়েছে, যা বন্ধ করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন,
“জিডিপি অনুপাতে ঋণ এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে। কিন্তু সুদ ও কিস্তি পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ওপর চাপ বাড়ছে। তাই পরিশোধ সক্ষমতা বজায় রাখতে কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর ব্যয় নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”
১০ বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি/
২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৪১.১৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত ১০ বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণের মাইলফলক অতিক্রম করে।
রিজার্ভে স্বস্তির ইঙ্গিত/
বিদেশি ঋণ বৃদ্ধির মাঝেই বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। পাশাপাশি প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে এবং ডলারের বিনিময় হারেও অনিশ্চয়তা কমেছে।